Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রতিকূলতা সহিষ্ণু উন্নত জাত উদ্ভাবন

খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রতিকূলতা সহিষ্ণু উন্নত জাত উদ্ভাবন

ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম

সারা বিশ্বের মানুষের ক্ষুধা নিবারণের লক্ষ্যে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ১৯৪৫ সাল থেকে ১৬ অক্টোবরকে বিশ্ব খাদ্য দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। পরবর্তীতে ১৯৮১ সাল থেকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নিবৃত্তির লক্ষ্যে এবং সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশের সরকার ও জনগণকে নিয়ে প্রতিপাদ্যভিত্তিক বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য `Our actions are our future. Better production, better nutrition, a better environment and a better life' অর্থাৎ আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ। ভালো উৎপাদনে ভালো পুষ্টি আর ভালো পরিবেশই উন্নত জীবন। সে  প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যের জোগান নিশ্চিতকরণ, উন্নত জীবনযাপন এবং পরিবেশ উন্নয়নে এখনও বিরাট চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রতি বছর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হচ্ছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জনসংখ্যা সাড়ে ৭ কোটি থেকে দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে প্রায় ১৬ কোটি ৯১ লাখ এবং প্রতি বছর ২০-২২ লাখ লোক জনসংখ্যা যোগ হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের জনসংখ্যা যদি ১.৩৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন জনসংখ্যা প্রায় ২৩ কোটি হবে । এই বাড়তি জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা জোরদারকরণ আবশ্যক।  


বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনায় বিনার কৃষি বিজ্ঞানীরা উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। পরিবেশকে বিঘ্নিত না করে দেশের খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ করার পাশাপাশি খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে বিনা কাজ করে যাচ্ছে। বিনা এ যাবৎ ১৮টি ফসলের ১১৭টি উচ্চফলনশীল ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু  জাতসহ অর্ধশতাধিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। তন্মধ্যে বিনা উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল বন্যাসহিষ্ণু বিনাধান-১১ ও বিনাধান-১২; লবণাক্ততাসহিষ্ণু ধানের জাত বিনাধান-৮, দ্বৈত লবণাক্ততা ও বন্যাসহিষ্ণু বিনাধান-২৩; লবণাক্ততাসহিষ্ণু চীনাবাদামের জাত বিনা চীনাবাদাম-৫,৬, ৭,  ৮,  ৯,  ১০; লবণাক্ততাসহিষ্ণু সয়াবিনের জাত বিনাসয়াবিন-২, ৩, ৫ ও বিনাতিল-২; খরাসহিষ্ণু ধানের জাত বিনাধান-৭, ১৯, ২১; খরাসহিষ্ণু মুগ এবং মসুরের জাত বিনামুগ-৮ ও বিনামসুর-৯; পানি ও সার সাশ্রয়ী বিনাধান-১৭; জিংকসমৃদ্ধ বিনাধান-২০, সাময়িক জলাবদ্ধতাসহিষ্ণু বিনাসরিষা-৯ এবং পরিবেশবান্ধব জীবাণুসার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিনা উদ্ভাবিত জাতগুলো ধানের ক্ষেত্রে ৬ লাখ হেক্টর, ডালের ক্ষেত্রে ৫ লাখ হেক্টর এবং তেলজাতীয় ফসলের ক্ষেত্রে ০.৫ লাখ হেক্টর জমি চাষাবাদ হয়েছে।


হাওড় তথা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা, বরেন্দ্র অঞ্চলে খরা এবং দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়ার কারণে এ দেশে ধানের উৎপাদন সন্তোষজনক না হওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আকস্মিক বন্যা, অতি বন্যা, জোয়ারের বন্যা, পাহাড়ি ঢলের বন্যার কারণে আবাদি জমি ক্রমাগত কমে যাচ্ছে, বিশেষ করে ধান চাষ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের জেলাসমূহ বিশেষ করে রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলায় বন্যার কারণে ধান চাষ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ১৪০ লাখ হেক্টর এবং ধান চাষের আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ১১০ লাখ হেক্টর। বন্যাকবলিত জমির পরিমাণ ২৬ লক্ষ হেক্টর, যা মোট আবাদি জমির প্রায় ২৪% এবং জোয়ারের পানির কারণে বন্যাকবলিত প্রায় ১৬ লাখ হেক্টর। বাংলাদেশে এরকম প্রায় ২০ লাখ হেক্টর আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকা রয়েছে যেখানে এই জাতের ধান চাষে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কর্তৃক উদ্ভাবিত জলমগ্নতাসহিষ্ণু ধানের জাত বিনাধান-১১ ও বিনাধান-১২ যা প্রায় ২৫ দিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ জলমগ্ন থাকলেও স্বাভাবিক ফলন দিতে সক্ষম। যা ২০-২৫ দিন জলমগ্নতা সহ্য করার পরও বন্যা আক্রান্ত জমিতে হেক্টর প্রতি ফলন ৪.০-৪.৫ টন এবং বন্যামুক্ত স্বাভাবিক জমিতে ৫.০-৫.৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। আমন মৌসুমে বিনাধান-১১ জাতটি ১১০-১১৫ দিনে ও বিনাধান-১২ জাতটি ১২০-১২৫ দিনে পাকে। বাংলাদেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের জেলাসমূহে প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ অর্থাৎ ১৩ লক্ষ হেক্টর জমি ধান চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে এবং বন্যাপ্রবণ এলাকায় এ জাত দু’টির গড় ফলন প্রায় ৫ টন যা চালে হেক্টরপ্রতি ৩.৫ টন পাওয়া যাবে। এ হিসেবে প্রায় অতিরিক্ত ৪৫ লাখ টন চাল উৎপাদিত হবে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নবদিগন্তের সূচনা করবে।


খরা কৃষির অন্যতম সাধারণ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ হেক্টর জমি বিভিন্নপর্যায়ের খরায় আক্রান্ত হয়। গাছের বৃদ্ধির পর্যায়ে গড় বৃষ্টিপাতের অভাব মাটিতে পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে, যা গাছের ক্ষতি করে। আমন ধানের প্রায় ৩ লাখ হেক্টর আবাদযোগ্য জমির ৮০% জমিতে চাষ করা হয়, যা বিভিন্ন পর্যায়ের খরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে বিনা খরাসহিষ্ণু ধানের জাত বিনাধান-৭, বিনাধান-১৯, বিনাধান-২১ উদ্ভাবন করেছে। এ ছাড়াও বিনাধান-১৭ ধানের জাতটি ৪০% পানি ও ৩০% সার সাশ্রয়ী। লবণাক্ত এলাকা ছাড়া দেশের সকল রোপা আমন অঞ্চল বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, পাবনা, রাজশাহীসহ ঢাকা, কুমিল্লা, যশোর, কুষ্টিয়া ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে জাতটির গড় ফলন ৬.৮ টন/হেক্টর এবং সর্বোচ্চ ফলন ৮.০ টন/হেক্টর।


বাংলাদেশের ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৭০ ভাগ অঞ্চল সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১ মিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থিত। এতে বন্যার আশঙ্কা প্রবল। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ২০৫০ সাল পর্যন্ত ১ মিটার বাড়তে পারে। যার প্রভাবে প্রায় ৩০০০ মিলিয়ন হেক্টর জমি স্থায়ীভাবে হারিয়ে যেতে পারে এবং সার্বিক উৎপাদন শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ কমে যেতে পারে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় জোয়ার-ভাটা এবং জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সমুদ্রের লোনা পানি কৃষি জমিতে প্রবেশ করায় আবাদি জমি ক্রমাগত লবণাক্ত হয়ে পড়ছে ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে। ফলে আবাদি জমি ফসল চাষের আওতায় আনা যাচ্ছে না। এ সকল জমিতে বিনা উদ্ভাবিত লবণাক্ততাসহিষ্ণু ধানের জাত বিনাধান-৮, বিনাধান-১০ ও বিনাধান-২৩ কৃষির উৎপাদন অব্যাহত রাখবে। এর মধ্যে বিনাধান-২৩ এমন একটি ধানের জাত, যা ৮ ডেসি সিমেন/মিটার মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারবে এবং ১৫ দিন পর্যন্ত জলমগ্ন থাকলেও স্বাভাবিক ফলন দিতে সক্ষম। দ্বৈত লবণাক্ততা এবং বন্যাসহিষ্ণু এ জাতটি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১০ লক্ষ হেক্টর লবণাক্ততা ও ২৬ লক্ষ হেক্টর বন্যা আক্রান্ত আমন ধানের জমির প্রায় শতকরা ২০-৩০ ভাগ অর্থাৎ ৭-১০ লক্ষ হেক্টর জমি চাষের আওতায় আনা যায় তবে চালের ফলন হেক্টরপ্রতি ৩.০ টন হিসেবে অতিরিক্ত প্রায় ২০-৩০ লক্ষ টন চাল উৎপাদিত হবে বলে আশা করা যায়।


এ ছাড়াও বিনা উদ্ভাবিত অন্যান্য প্রতিকূলতা সহনশীল ডাল, তেল, মসলা ও সবজিজাতীয় ফসলের উচ্চফলনশীল জাত চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে।


বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারিতে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হলেও বর্তমান সরকারের সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপের ফলে এই মহামারিতেও দেশের উন্নয়নের যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। দেশে এমন দুর্যোগকালেও ধানসহ বিভিন্ন ফসলের বাম্পার ফলনের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। তবে করোনা-উত্তর বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবিলায় সবাইকে আরও সচেষ্ট হতে হবে। কৃষি উৎপাদনে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রেখে আবাদযোগ্য জমিগুলোর জন্য বন্যা, খরা, লবণাক্ততা, পোকামাকড় ও রোগ সহনশীল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে টিকে থাকতে পারে এমন জাত উদ্ভাবন ও ব্যাপক সম্প্রসারণের কাজ চলমান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মতে দেশের আবাদযোগ্য প্রতি ইঞ্চি জমিতে উন্নত প্রযুক্তি অনুসরণ করে মৌসুমভিত্তিক বিভিন্ন ফসলের আবাদ নিশ্চিত করতে হবে। এক ফসলি দুই ফসলি জমিগুলোকে চার ফসলি জমিতে পরিণত করে শস্যের নিবিড়তা ১৯৪% থেকে উন্নীত করতে হবে। ফলশ্রুতিতে উৎপাদন দ্বিগুণ ও আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।


পরিশেষে, বাংলাদেশের জনগণ জীবনধারণের জন্য কৃষির উপর নির্ভর করে। এ দেশের শতকরা ৬০% এরও বেশি লোক কৃষি কাজের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে এবং কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে কৃষি। বিনা উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তি এবং অপেক্ষমান জাত ও প্রযুক্তি ক্ষুধা নিবারণ, খাদ্য এবং পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন করবে এবং আমাদের দেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত লাভ করতে পারবে।

লেখক : মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ। ফোন : ০৯১৬৭৮৩৪, ইমেইল : dg@bina.gov.bd

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon